বর্ষাকাল নিয়ে উক্তি, স্ট্যাটাস ও বাণী

বর্ষাকাল একটি ঋতু যা মুখ্যতঃ অঞ্চলিক জলবায়ুগুলোতে বিদ্যমান। এটি পৃথিবীর পূর্ব ও পশ্চিম গোলার্ধে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে এবং প্রতিটি গোলার্ধে এটি একটি পর্যাপ্ত সময়কাল ধরে। বর্ষাকালের সময় পৃথিবীর কয়েকটি সময়কালে ঘটবার উপায় পরিবর্তন করে এবং অংশগ্রহণকারী অঞ্চলের সাথে সাথে পরিবর্তন করে তুলে ধরে। এই ব্যাপক সারি পরিবর্তনের ফলে বর্ষাকালে আমরা পৃথিবীর জীবজন্তুদের সাথে সম্পর্কিত পরিবেশগত ও জীবনযাপনের মধ্যে কিছু পরিবর্তন দেখতে পাই।

এই ঋতুর প্রধান লক্ষণ হল বৃষ্টির পরিমাণ ও সময়ের পরিবর্তন। সমুদ্র, নদী, হিমনদ এবং জলাভূমির সঙ্গে মিশে বর্ষাকালে বৃষ্টির স্থানান্তর ঘটে। পৃথিবীর উপগ্রহ ও বায়ু সংক্রান্ত চলমান সার্মিক পদার্থ এবং তাপমাত্রা পরিবর্তন করে এবং এতে সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবীর সাপেক্ষে বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টির সংখ্যা, তাপমাত্রা, ওজন এবং পারদ বেশি বা কম হতে পারে। সাধারণত বর্ষাকালে তাপমাত্রা বেশ উচ্চ থাকে এবং পরিমাণিত বৃষ্টির সাথে বাতাসের সংযোগ থাকে। এর ফলে জলাবৃষ্টি ঘটার সম্ভাবনা বেশি থাকে এবং জলাবৃষ্টির মাধ্যমে হাওয়ার পরিমাণও বাড়ে এবং গতিবিদ্যুত পদার্থগুলি পৃথিবীর পৃষ্ঠে অক্সিজেনের সাথে বিচরণ করে এবং সঙ্গে সঙ্গে বস্তুগুলির ওপর আবশ্যক প্রভাব ফেলে।

বর্ষাকাল নিয়ে উক্তি

বর্তমানে বৃষ্টিতে পরিণত হওয়া জল পৃথিবীর অদস্থ জলাবদ্ধ শস্যপাতি বৃদ্ধির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের মধ্যেও বর্ষাকালে বৃষ্টির পরিমাণ বেশি থাকে এবং এর ফলে প্রায় প্রতিবছরেই বনসম্পদ ও কৃষিপ্রধান অঞ্চলে সুস্থ চাষ বিপন্ন হয়। সাধারণত বর্ষাকালে বিভিন্ন জীবনধারী প্রাণীগুলি প্রাণিসমূহ ও চতুরপদ পাখীর সংখ্যা বেড়ে যায় কারণ বৃষ্টির পরিমাণ বেড়ে যায়। এছাড়াও বর্ষাকালে বিভিন্ন ফুল, গাছ এবং বনস্পতির প্রকৃতি পরিবর্তন করে এবং প্রাণিগুলির খাদ্যের সাথে সাথে জলের গতি বা নদীর প্রবাহের দিক পরিবর্তন হয়।

  • কেয়া পাতার তরী ভাসায় কমল -ঝিলে তরু-লতার শাখা সাজায় হরিৎ নীলে। ছিটিয়ে মেঠো জল খেলে সে অবিরল কাজলা দীঘির জলে ঢেউ তোলে আনমনে ভাসায় পদ্ম-পাতার থালিকা।।
    – কাজী নজরুল ইসলাম
  • মেঘের গানে বাজে বাতাসের মান্দতা, স্নিগ্ধ পুতুলের মত চলে ভাসে মাটিতে হাতা। সন্ধ্যা তারার আলোয় বিহঙ্গ আড়িয়ে যায়, হৃদয়ে আনন্দে ভরে প্রাণে মধুর প্রণয়।
  • ভরে যায় পৃথিবী রঙিন ফুলের গুচ্ছ, হাওয়ায় পড়ে ঝরা পাতার সময়ে মুক্তির সুচ্ছ। বর্ষাকালে পূর্ণিমার আলো মুছে যায় ছয়া, সূর্যের উদয় নিয়ে স্বপ্ন জ্বলে জাগা।
  • বর্ষার আগমনে পূর্ণিমার রাতে আঁধার, চোখে ভরে তার মাঝে অতীতের স্মৃতি আঁকার। মনে হাঁসির বাতাসে কবিতার সুর গায়, বর্ষার সুখের মেলা হয় হৃদয়ে মাঝে ছায়।
  • বৃষ্টির ছন্দে ভরে যায় মনের রঙে, পৃথিবী জাগে সুপ্রভাতের সুরঙ্গে। শীতের মাঝে ক্ষুদ্রতার দিকে চলে, বর্ষাকালের সঙ্গে ভালোবাসা উজ্জ্বল।

বর্ষাকাল নিয়ে স্ট্যাটাস

বর্ষাকালে বৃষ্টির পরিমাণ ও সময়ের পরিবর্তন আরও অন্যান্য পরিবেশগত পরিবর্তনের কারণে পৃথিবীর আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তন পায়। বৃষ্টির পরিমাণ বা সময় বেড়ে আসার জন্য তাপমাত্রা কমে যায় এবং হাওয়া হিমজলের সঙ্গে বিপরীত হয়ে গিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে তাপমাত্রা বেড়ে যায়। এছাড়াও বর্ষাকালে জলের প্রস্তুতি বাড়ে যায় এবং এর ফলে বৃষ্টিপাতের সময় জল ধরে রাখার জন্য সৃষ্ট প্রাকৃতিক নদীর পরিমাণ ও প্রস্তুতির সংখ্যা বেড়ে যায়। এই সব পরিবর্তনের ফলে বর্ষাকাল এ পৃথিবীর প্রাণীগুলির আহার ও বাসস্থান পরিবর্তন হয় এবং পানিতে জীবনধারী প্রাণীগুলির সংখ্যা বা প্রকৃতি পরিবর্তন পায়।

  • সে দেশে যবে বাদল ঝরে কাঁদে না কি প্রাণ একেলা ঘরে, বিরহ ব্যথা নাহি কি সেথা বাজে না বাঁশি নদীর তীরে।।
    – কাজী নজরুল ইসলাম
  • বর্ষাকালে এখানে, শীত-গ্রীষ্মে ওখানে বাস করবো – মূর্খরা এভাবেই চিন্তা করে। শুধু জানে না জীবন কখন কোথায় শেষ হয়ে যাবে।
    – গৌতম বুদ্ধ
  • মাঝে মাঝে বৃষ্টি নামে, একঘেয়ে কান্নার সুরের মতো সে-শব্দ। আমি কান পেতে শুনি। বাতাসে জামগাছের পাতায় সরসর শব্দ হয়। সব মিলিয়ে হৃদয় হা-হা করে উঠে। আদিগন্ত বিস্তৃত শুণ্যতায় কি বিপুল বিষণ্নতাই না অনুভব করি। জানালার ওপাশের অন্ধকার থেকে আমার সঙ্গীরা আমায় ডাকে। একদিন যাদের সঙ্গ পেয়ে আজ নিঃসঙ্গতায় ডুবেছি।
    – হুমায়ূন আহমেদ
  • খেলে চঞ্চলা বরষা-বালিকা মেঘের এলোকেশে ওড়ে পুবালি বায় দোলে গলায় বলাকার মালিকা।।
    – কাজী নজরুল ইসলাম
  • চপল বিদ্যুতে হেরি’ সে চপলার ঝিলিক হানে কণ্ঠের মণিহার, নীল আঁচল হতে তৃষিত ধরার পথে ছুড়ে ফেলে মুঠি মুঠি বৃষ্টি শেফালিকা।।
    – কাজী নজরুল ইসলাম

আরও পড়ুনঃ

বর্ষাকাল নিয়ে বাণী

সামগ্রিকভাবে বলা যায় যে, বর্ষাকাল পৃথিবীর নবজাগরণের মহাকাল। এটি পৃথিবীকে নতুন আবহাওয়া ও জলবায়ুর সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় এবং প্রাণীগুলির জীবনযাপনের সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন ক্ষেত্রে পরিবর্তন ঘটায়। আরও গবেষণার প্রয়োজন এবং সঠিক পরিচালনা দ্বারা আমরা বর্ষাকালের প্রভাব নিয়ন্ত্রণ করতে পারি এবং পৃথিবীর সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক সম্পদের সংরক্ষণ ও বর্ধনে অবদান রাখতে পারি। বর্ষাকালে বৃষ্টি পরিমাণের বেড়ে আসার জন্য তাপমাত্রা কমে যায় এবং বাতাসের সাথে সংযোগ ঘটে। এছাড়াও বৃষ্টির মাধ্যমে বৃষ্টিপাতের জল পৃথিবীর উপস্থিত শস্যপাতি বৃদ্ধি করে।

  • চৈত্রেতে থর থর বৈশাখেতে ঝড় পাথর জ্যৈষ্ঠতে তারা ফুটে তবে জানবে বর্ষা বটে।
    – ক্ষণা
  • কাগজ আবিষ্কারের পূর্বে মানুষ প্রেমের কবিতা লিখে রেখেছে আকাশে। সেই ভালোবাসার কবিতা এই বৃষ্টি, এই ভরা বর্ষা
    – মহাদেব সাহা
  • হে বর্ষা, এত বেশী ঝরোনা যে আমার প্রেয়সী আমার কাছে আসতে না পারে। ও এসে যাওয়ার পর এত মুষলধারায় ঝরো যেন ও যেতেই না পারে।
    – সংগৃহীত
  • যদি মন কাঁদে তুমি চলে এসো, চলে এসো এক বরষায়
    – হুমায়ূন আহমেদ
  • তুমি যদি না দেখা দাও, কর আমায় হেলা, কেমন করে কাটে আমার এমন বাদল-বেলা।
    – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

বর্ষাকাল নিয়ে বাণী

বর্ষাকাল নিয়ে কবিতা

বর্ষাকালে বৃষ্টিপাতের ফলে জলের প্রস্তুতি ও পানিতে জীবনধারী প্রাণীগুলির সংখ্যা বেড়ে যায়। জলবৃষ্টি পানি অধিকতর প্রতিষ্ঠিত নদী এবং বিভিন্ন জলাভূমিতে পৌঁছে দেয়। এর ফলে পৃথিবীর প্রাণীগুলির জীবনযাপন ও বাসস্থানে পরিবর্তন ঘটে। অতিরিক্ত বৃষ্টির মাধ্যমে উদ্ভিদ ও প্রাণীগুলির জীবনযাপনের প্রাকৃতিক পরিবেশ উন্নত হয়। বন্যার প্রাণীগুলির জন্য বর্ষাকালে একটি প্রধান অবস্থান সৃষ্টি হয় কারণ তখন বন্যার উচ্চ প্রানী বিভিন্ন অঞ্চলে চলে যায় এবং জীবনযাপনের জন্য নতুন বাসস্থান উপস্থাপন করে।

সোনার তরী

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

গগনে গরজে মেঘ, ঘন বরষা।

কূলে একা বসে আছি, নাহি ভরসা।

রাশি রাশি ভারা ভারা

ধান কাটা হল সারা,

ভরা নদী ক্ষুরধারা

খরপরশা।

কাটিতে কাটিতে ধান এল বরষা।

একখানি ছোটো খেত, আমি একেলা,

চারি দিকে বাঁকা জল করিছে খেলা।

পরপারে দেখি আঁকা

তরুছায়ামসীমাখা

গ্রামখানি মেঘে ঢাকা

প্রভাতবেলা–

এ পারেতে ছোটো খেত, আমি একেলা।

গান গেয়ে তরী বেয়ে কে আসে পারে,

দেখে যেন মনে হয় চিনি উহারে।

ভরা-পালে চলে যায়,

কোনো দিকে নাহি চায়,

ঢেউগুলি নিরুপায়

ভাঙে দু-ধারে–

দেখে যেন মনে হয় চিনি উহারে।

ওগো, তুমি কোথা যাও কোন্‌ বিদেশে,

বারেক ভিড়াও তরী কূলেতে এসে।

যেয়ো যেথা যেতে চাও,

যারে খুশি তারে দাও,

শুধু তুমি নিয়ে যাও

ক্ষণিক হেসে

আমার সোনার ধান কূলেতে এসে।

যত চাও তত লও তরণী-‘পরে।

আর আছে?– আর নাই, দিয়েছি ভরে।

এতকাল নদীকূলে

যাহা লয়ে ছিনু ভুলে

সকলি দিলাম তুলে

থরে বিথরে–

এখন আমারে লহ করুণা করে।

ঠাঁই নাই, ঠাঁই নাই– ছোটো সে তরী

আমারি সোনার ধানে গিয়েছে ভরি।

শ্রাবণগগন ঘিরে

ঘন মেঘ ঘুরে ফিরে,

শূন্য নদীর তীরে

রহিনু পড়ি–

যাহা ছিল নিয়ে গেল সোনার তরী।

পরিশেষে

বর্ষাকাল পৃথিবীর পরিবেশ ও জীবনযাপনে বিভিন্ন পরিবর্তন নিয়ে আসে। সেই সাথে বাসস্থান, আবহাওয়া এবং খাদ্য সরবরাহের বিষয়ে আমাদের সচেতনতা থাকলে আমরা পরিবর্তনের জন্য উপযুক্ত পরিকল্পনা করতে পারি এবং পৃথিবীর প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ ও বৃদ্ধির জন্য সঠিক পরিচালনা প্রয়োগ করতে পারি। পরিবর্তনের সাথে সাথে বর্ষাকাল প্রভাবের উপর আমাদের সচেতনতা ও পরিকল্পনা একটি মুখ্য অংশ হওয়া উচিত।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top